4.5/5 - (2 votes)

গর্ভকালীন সময়টা গর্ভবতী মা ও শিশু উভয়ের জন্য অনেক গুরত্বপূর্ণ। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা এবং জটিলতা দেখা দেয়। এসময় সামান্য অসচেতনতা ও অবহেলা মা ও তার অনাগত সন্তানের ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। তাই সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সময়টায় মা এর বিশেষ যত্ন নেয়া উচিত। যদি গর্ভবতী হওয়ার আগেই একজন মা এসব ঝুঁকি বা সমস্যার কথা জানতে পারে তহালে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলো থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যায়। আপনিও কি একজন মা হতে চলেছেন? তাহলে আজকের এই ব্লগটি আপনার জন্যই।

গর্ভকালীন সময়ে সহবাস করা যাবে কি না?

বেশিরভাগ গর্ভবতী নারী তাদের স্বামীর মনেও খুবই কমন একটা প্রশ্ন থাকে যে “গর্ভবস্থায় সহবাস বা সেক্স করা যায় যাবে কি না? অথবা গর্ভবতী মা যৌন মিলন করলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে?” এর সহজ উত্তর হচ্ছে যদি গর্ভকালীন সময়ে যদি কোনো জটিল ধরনের শারীরিক সমস্যা না হয় তাহলে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায়ও সহবাস করা যাবে। কিন্তু কিছু কারণ যখন শারীরিক মিলন বা যৌন মিলন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভকালীন সময়ে নিরাপদে সহবাস

অনেক দম্পতির জন্য গর্ভাবস্থায় সহবাস বা যৌন মিলন নিরাপদ হলেও সেক্স করাটা সহজ মনে হয় না। কারণ গর্ভকালীন সময়ে যৌন মিলনের জন্য আপনাকে অন্য ধরনের পজিশন চেষ্টা করে দেখতে হবে কোনটা আপনাদের দুজনের জন্যই সুবিধাজনক। এ সময়ে একটু অসাবধানতা আপনার বাচ্চার ক্ষতির কারণ হতে পারে।

মনে রাখবেন, আপনার কিংবা আপনার স্বামীর কোন প্রকার যৌন ব্যাধি থাকলে গর্ভকালীন সময়ে সেক্স করা থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে অন্যান্য সময়কালের মত একই পজিশনে সেক্স করা যায় না।

কোন সময়ে সহবাস করা যাবে না

গর্ভবতী হওয়ার পর প্রথম ৩ মাস ও শেষ ৩ মাস অবশ্যই সেক্স করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় শুধু ৪র্থ, ৫ম, ও ৬ষ্ঠ মাস যৌনমিলন করা যবে। গর্ভাবস্থায় ছয় থেকে সাতমাসে নারীর মধ্যে যৌন কামনা বেড়ে যায়, তখন যৌন মিলন না হলে নারীর মানসিক ক্ষতি হতে পারে। তাই এ সময় সেক্স করা যেতে পারে তবে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে।

আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজতে

গর্ভাবস্থায় সেক্সের সময় সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া গর্ভকালীন সময়ে সহবাসের ফলে পেটে ব্যথা ও মৃদু রক্তপাত হতেই থাকে। গর্ভকালীন সময়ে অল্প কিংবা বেশি রক্তক্ষরন পরিলক্ষিত হলে শাররীক মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক সময় অনিরাপদ যৌন মিলনের ফলে বিকলাঙ্গ শিশু জন্মাতে পারে।

হঠাৎ রক্তপাত হলে করণীয় কি?  

প্রসবের সময় গর্ভবতী মায়ের রক্তপাত হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এছাড়া গর্ভকালীন যেকোনো সময় রক্তপাাত বা প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্তপাত গর্ভফুল না পড়াটা বিপদের লক্ষণ। এরকম অবস্থা বাচ্চা এবং মা দু’জনের জীবনের জন্যই হুমকীস্বরুপ। জরায়ু ছাড়া অন্যকোনো স্থানে ডিম্বাণুর অবস্থান, ছোটখাটো আভ্যন্তরীন জটিলতায় গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে রক্তপাতের কারণে। তাই এ অবস্থায় দেরী না করে গর্ভবতী মাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা 

আবার গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর মায়ের রক্তচাপের দিকেও লক্ষ্য রাখাটা জরুরি। গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তারা একলামশিয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। বিশেষ করে গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পরে যে সব মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় তাদের ঝুঁকি থাকে অনেক। এজন্য যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিজ ও বাচ্চা উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করা।

গর্ভকালীন সময়ে রক্তস্বল্পতা

হঠাৎ রক্তপাত এবং উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় আরেকটি জটিলতা হলো রক্তস্বল্পতা। গর্ভবতী মায়ের রক্তে যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১০০ মিলিলিটারে ১০ গ্রাম থেকে কম থাকে অথবা রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম থাকে, তবে তাকে গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা বলে। রক্তস্বল্পতার কিছু লক্ষণ হলো সামান্য কিছু করলেই হাঁপিয়ে ওঠা, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া এবং রক্তচাপ কমে যাওয়া। এছাড়া চেহারা নীলাভ হয়ে যাওয়া, নখ নীল বা সাদাটে হয়ে যাওয়া, শরীর ঝিমঝিম করা এসব গুলো হল রক্তস্বল্পতার লক্ষণ।

তলপেটে তীব্র ব্যথা

গর্ভকালীন সময় প্রথম তিন মাসে তলপেটে হালকা ব্যথা অনভূত হতে পারে। জরায়ু ধীরে ধীরে বড় হয়ে এর আশে পাশের লিগামেন্টে টান পড়ার জন্য তলপেটে ও কুঁচকিতে হালকা ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি তলপেটে তীব্র ব্যথা হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারকে দেখানো উচিত। এ ক্ষেত্রে জরায়ু ছাড়া অন্যান্য স্থান যেমন পেটের ভেতর, ডিম্বাশয়ের মধ্যে ইত্যাদি অংশে গর্ভধারণ হয়ে থাকে এবং অনেক সময় এটি ফেটে গিয়ে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩৬ সপ্তাহে নূন্যতম প্রতি মাসে একবার এবং ৩৬ সপ্তাহের পর প্রতি সপ্তাহে একবার করে মাকে স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তার দেখানো উচিত।

গর্ভবতী মায়ের পা ফুলে যাওয়া বা পায়ে পানি আসা

গর্ভকালীন সময়ে মায়ের পায়ে সামান্য পানি আসা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। গর্ভাবস্থা শিশুর বৃদ্ধির কারণে মায়ের শরীরে প্রায় ৫০% বেশি রক্ত ও তরল উৎপন্ন হয়। এই অতিরিক্ত রক্ত ও তরলের কারনে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়। একটু বেশি হাঁটাহাঁটি করলে পায়ের পানি চলেও যায়। কিন্তু যদি এরসাথে হাতে মুখেও পানি চলে আসে এবং অস্বস্তি হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

অনেকক্ষন একটানা কাজ করা, ভিটামিনযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাওয়া বা অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গর্ভকালীন সময়ে পায়ে পানি আসতে পারে। পায়ে পানি জমলে বা পা ফুলে গেলে শরীরে পানি জমলে বা শরীর ফুলে গেলে গর্ভবতীর রক্তচাপ, প্রস্রাব পরীক্ষা করা ও ওজন দেখা উচিত। প্রাথমিকভাবে পা উঁচুতে রেখে বিশ্রাম নেওয়ােএবং খাবারের সাথে বাড়তি লবণ এড়িয়ে চলতে হবে।

গর্ভকালীন সময়ে বমি ভাব ও অতিরিক্ত বমি হওয়া

সামান্য একটু বমিভাব বা না খেতে চাওয়ার প্রবণতা যে গর্ভবতী মায়েদের হয় এটা আমরা সবাই জানি। প্রায় ৫০ শতাংশ গর্ভবতী মায়ের মধ্যে সকাল বেলায় বমি করার প্রবণতা থাকে। বলা হয় যে, এটা গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস এ সমস্যা দেখা দেয়। কিন্ত অতিরিক্ত বমি হওয়া সাধারণ লক্ষণ নয়। বমি ভাবের কারণে আপনি যদি কিছুই খেতে না পারেন তাহলে ড্রিহাইড্রেশনের সমস্যা হবে যেটা বাচ্চার জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। তাই এই সমস্যা দেখা দিলেই আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

অতিরিক্ত বমি করার প্রবণতা থাকলে তেলবিহীন শুকনো খাবার যেমন- মুড়ি, খই, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সকালে ভাজা বা শুকনো খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। ৩ বেলায় ভারি খাবার না খেয়ে একটু পর পর খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

বাচ্চার নড়াচড়া বা মুভমেন্ট

গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চার নড়াচড়া হবু মাকে সুন্দর অনুভূতি দেয়। গর্ভাবস্থায় সাধারণত ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করা যায়। পেটের ভেতর বাচ্চা ঘুমায় বা খেলা করে, যার অনুভূতি মা বাইরে থেকে বুঝতে পারেন। বাচ্চা কতটুকু নড়াচড়া করবে সেটার নির্দিষ্ট কোনো পরিমাপ না থাকলেও এর একটা নির্দিষ্ট সীমা এবং সময় আছে যেটা শুধু মা-ই অনুভব করতে পারেন। বাচ্চার অধিক নড়াচড়া বা কম নড়াচড়া দু’টিই মায়ের জন্য ক্ষতিকর।

গর্ভে সন্তান ধারণকারী প্রতিটি মা ই পেটে সন্তানের নড়াচড়া অনুভব করেন। হুট করে যদি অনুভব করেন যে আপনার বাচ্চার মুভমেন্ট টের পাচ্ছেন না তাহলে এটা সত্যি আপনার গর্ভাবস্থার বড় ধরণের জটিলতা। বাচ্চা ঠিকঠাক আছে কিনা সেটা বোঝার খুব সুন্দর একটা উপায় আছে। এজন্য প্রথমে খানিকটা ঠান্ডা খাবার বা পানি পান করুন। তারপর চুপচাপ শুয়ে পড়ুন বিছানায়। বাচ্চা যদি পেটে লাথি মারে তাহলে বুঝতে হবে সবকিছু ঠিকঠাক আছে। ডাক্তাররা বলেন, বাচ্চা যদি দুই ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ বার লাথি মারে তাহলে বাচ্চাকে সুস্থ বলে মনে করা যায়। তবে নড়াচড়া ১০ বারের কম হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটাই ভালো।

বারবার প্রস্রাবের বেগ

প্রেগনেন্ট মহিলাদের মধ্যে বারবার প্রস্রাবের বেগ আরেকটি জটিলতা। ৮ থেকে ১২ তম সপ্তাহে বার বার প্রস্রাবের বেগ দেখা যায়। এ সময়টায় জরায়ুর আকার বড় হওয়ার কারণে মূত্রথলিতে চাপ দেয় বলে এমনটা হয়। আবার গর্ভকালীন সময়ে হরমোন ইস্ট্রোজেন ও রক্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার জন্য সাদা স্রাব বেড়ে যেতে পারে। গর্ভের প্রথম ৩ থেকে ৪ মাস এটি হওয়া স্বাভাবিক। তবে সাদা স্রাবের সাথে যদি দুর্গন্ধ থাকে বা চুলকানি হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় যদি কেঁপে কেঁপে ভীষণ জ্বর আসে এবং প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হয় তবে তা অনেক সময় মূত্রনালির সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করে।

গর্ভবতী মা নিজের মধ্যে যাকে ধারণ করেছেন তাকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে পৃথিবীতে আনা শুধু হবু মায়েরই দায়িত্ব নয়, পরিবারের সবার। মনে রাখবেন, আমাদের দেশে প্রসবকালে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কিন্তু অনেক বেশি। এজন্য স্বামী বা পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আপনার উচিত গর্ভবতী মায়ের বাড়তি যত্ন নেয়া। সবাই সচেতন হলে তবেই তো পুরো ঘর আলো করে ফুটফুটে নতুন  একজন নতুন সদস্য আসবে।

বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য, সেবা, এবং পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন তাসলিমা ম্যারেজ মিডিয়ার সাথে।
কল করুনঃ+880-1407-004393 অথবা +88-01782-006615 এ।
আমাদের মেইল করুন taslima55bd@gmail.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here