5/5 - (2 votes)

বিয়ে নিয়ে তাসলিমা ম্যারেজ মিডিয়ার ওয়েবসাইটে অনেকগুলো ব্লগ লিখেছি। আজকে বিয়েতে যে কাজগুলো করা সুন্নত বা বিয়ের ‍সুন্নত নিয়ে আলোচনা করবো।

বিয়ে করা ফরজ নাকি সুন্নত নাকি ওয়াজিব?

বর্তমান যুগে নারী-পুরুষের মধ্যে যে পরিমাণে যিনা ও ব্যভিচারের মতো বড় বড় গোনাহ হচ্ছে, বিয়ের মাধ্যমে এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিয়ে করলে নৈতিক চরিত্রের উন্নতি ঘটে, বংশ পরম্পরা অব্যাহত থাকে এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো বিয়ে করলে মানসিকভাবে দেহ ও মন সুস্থ থাকে। রাসূল (সা) বলেছেন-

বিয়ে হলো আমার সুন্নত, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত তরিকা ছেড়ে চলবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি)

অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন-

`হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিয়ে করা কর্তব্য, কেননা বিয়ে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌন অঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী।’ (মিশকাত)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিয়ে করা ফরজ নাকি সুন্নত নাকি ওয়াজিব? এটা মূলত আপনার অবস্থার উপর নির্ভর করবে। বিয়ে করা সাধারণ অবস্তায় সুন্নত, কখনো ফরজ আবার কখনো নাজায়েজ।

প্রথমত, স্বাভাবিক অবস্থায় সাবালক হলে বিয়ে করা সুন্নত। যদি শারীরিক চাহিদা প্রবল না থাকে, কিন্তু স্ত্রীর অধিকার আদায়ের সামর্থ্য থাকে তখন বিয়ে করা সুন্নত। তবে এ অবস্থায় খারাপ কাজ যেমন ব্যভিচারের প্রতি ঝোঁকার আশঙ্কা না থাকলে বিয়ে না করলে কোনো অসুবিধা নেই।

আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজতে

বিয়ে করা ফরজ তখন হয় যখন বিয়ে না করলে গোনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে হচ্ছে। যদি সামর্থ্য থাকার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা এতো বেশি থাকে যে, বিয়ে না করলে যিনা, ব্যভিচার বা হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তখন বিয়ে করা ফরজ।

বিয়ে করা কখন ওয়াজিব হয়? এর উত্তর হলো, যখন শারীরিক চাহিদা থাকে এবং এই পরিমাণ সামর্থ্য থাকে যে তার এবং স্ত্রীর প্রতিদিনের খরচ বহন করতে পারবে, তখন বিয়ে করা ওয়াজিব। এ অবস্থায় বিয়ে থেকে বিরত থাকলে গুনাহগার হবে।

আর যদি কারো আশঙ্কা থাকে যে, সে বিয়ের পর আর্থিক, শারীরিক বা মানসিকভাবে স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে পারবে না তার জন্য বিয়ে করা নাজায়েজ।

বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকলে কি করা উচিত?

আল্লাহ্‌র ইবাদত করার জন্য শারীরিক, মানসিক ও চারিত্রিক পবিত্রতা প্রয়োজন। বিয়ের মাধ্যমে এসব পবিত্রতা অনেকাংশে রক্ষা করা যায়। তবে দেখা যায়, অনেকের বিয়ের ইচ্ছে আছে, শারীরিকভাবে সক্ষম, কিন্তু স্ত্রীকে ভরণ পোষণ দেয়ার ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় মহানবী (সা) বিয়ে না করে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ রোজা দৈহিক কাম উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন-

‘যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজা পালন করে। কারণ রোজা যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত করে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৬৮৫;  মুসলিম, হাদিস : ৩৪৬৬)

সুতরাং বিয়ের বয়স হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীকে ভরণ পোষণ দেয়ার সামর্থ্য না থাকলে রোজা রাখতে হবে এবং এ সময় সক্ষমতা অর্জনের জন্য বেশি বেশি কাজ ও আল্লাহ্‌র দরবারে প্রার্থনা করতে হবে।

বিয়েতে যে কাজগুলো করা নবীজী (সা) এর সুন্নত

বিয়ের সময় আমাদের নবীজীর কিছু সুন্নতী কাজ সম্পন্ন করতে হয়। চলুন সেগুলো জেনে নিইঃ

১. ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক, বিয়ে সাদাসিধে হবে, কোনোরকম জাঁকজমক থাকবে না। বিয়েতে অহেতুক বেশি টাকা খরচ করা, পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করা, বাদ্য-বাজনা এগুলো বিয়ের ‍সুন্নত নয়। (তাবরানী আউসাত, হাদীস নং- ৩৬১২)

২. বিয়ের আগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা বিয়ের ‍সুন্নত নয়। সুতরাং বিয়ের আগে এই জিনিসগুলো খেয়াল করতে হবে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪ : ২০০/ বুখারী হাদীস নং- ৫০৯০)

৩. ইজাব অর্থাৎ বরের কাছে মেয়েপক্ষের অভিভাবক বা তার কোনো প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব উপস্থান করতে হবে। যেমন- ‘আমি অমুককে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম’ অথবা এ ধরনের অন্য কোনোভাবে প্রস্তাব পেশ করা।

৪. বিয়ের আকদ করানোর দায়িত্ব অবশ্যই মেয়ের বাবা-মা অথবা অন্য অভিভাবককে পালন করতে হবে। রাসূল (সা) বলেছেন-

’যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।’ (তিরমিজি, হাদিস- ১০২১)

আর বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন-

‘অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোনো বিবাহ নেই।’ (সহিহ জামে, হাদিস- ৭৫৫৮)।

সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন আযা পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার-৩/৯; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)

৬. বিয়ের জন্য দেনমোহর নির্ধারণ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। পাত্রপক্ষের সাধ্যের মধ্যে দেনমোহর নির্ধারণ করতে হবে। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২১০৮; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ১১১৪)

৭. রোজার ঈদের মাস অর্থাৎ ওয়াল মাসে এবং জুম’আর দিনে মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন করা বিয়ের ‍সুন্নত। এ ছাড়াও যেকোনো মাসের যে কোন দিন বিয়ে করলেও কোনো ক্ষতি হবে না। (মুসলিম, হাদীস নং- ১৪২৩/ বাইহাকী, হাদীস নং- ১৪৬৯৯)

বিয়ের ‍সুন্নতঃ ওয়ালিমা

বিয়ের খবর এলাকার সব মানুষদের মধ্যে প্রচার করা এবং বিয়ের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মধ্যে খেজুর বিতরণ করা আমাদের নবীজী (সা) এর সুন্নত। এছাড়া বিয়ের ওয়ালিমা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। বিয়ের পর ছেলের পক্ষে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরিব-মিসকিনদের তৌফিক অনুযায়ী আপ্যায়ন করাকে ‘ওয়ালিমা’ বলে। বাংলা ভাষায় আমরা এটাকে ’বউভাত’ বলি।

রাসুল (সা) নিজেও ওয়ালিমা করেছেন এবং সাহাবিদেরও করতে বলেছেন। রাসুল (সা) জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-কে বিয়ে করার পরদিন ওয়ালিমা করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৫১৭০)

বিয়ের পরদিন বা পরবর্তী সময়ে সুবিধামতো দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওয়ালিমা করা উচিত। তবে বিয়ের পর তিন দিনের মধ্যে করা উত্তম। যেকোনো প্রকার খাবার দিয়েই ওয়ালিমা করা যায়। ওয়ালিমা একটি ইবাদত। এক দিন ওয়ালিমা করা সুন্নত, দুই দিন ওয়ালিমা করা মুস্তাহাব, তিন দিন ওয়ালিমা করা জায়েজ। (মুসলিম: ১৪২৭)

নবী করীম (সা) ছাফিয়াহ (রা)-কে বিয়ের পর ৩ (তিন) দিন যাবৎ ওয়ালিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস নম্বর-৩৮৩৪)

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) জয়নব (রা)-কে বিবাহ করার পর যতবড় ওয়ালিমা করেছিলেন, এতবড় ওয়ালিমা তিনি তাঁর অন্য কোনো স্ত্রীর বেলায় করতে দেখা যায়নি।। (বুখারি: ৫১৬৮; মুসলিম: ২৫৬৯; মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১১)

ওয়ালিমায় সাধ্যের অতিরিক্ত খরচ করা কিংবা খুব উঁচুমানের খাবার ব্যবস্থা করা জরুরি নয়। বরং নিজের যা সামর্থ্য সে অনুযায়ী খরচ করাই বিয়ের সুন্নত। বর্তমান যুগে ওয়ালিমার এই সুন্নত বর্জনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে ওয়ালিমায় শুধু ধনী আত্মীয়স্বজন ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরিব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয় না, সেই ওয়ালিমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওয়ালিমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (আবু দাউদ: ৩৭৫৪)

বিয়ের কিছু প্রচলিত যেসব কুসংস্কার এবং হারাম কাজ

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের দেশে বিয়ের ‍সুন্নত এর অনুসরণ করা হয় না। তাছাড়া আমাদের সমাজে বিয়ে নিয়ে দিন দিন যেসব প্রথা ও কুসংস্কার সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো ইসলামে দৃষ্টিতে হারাম। যেমন, আমাদের দেশে মেয়ের অনুমতি আনার জন্য ছেলেপক্ষ সাক্ষী পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু ইসলামে এটার নিষেধ আছে। কারণ এতে পর্দার বিধান খেলাফ হয় বলে তাহা হারাম। আবার অনেকে বিয়ের সময় বর ও কনেকে তিনবার করে ইজাব কবুল পাঠ করিয়ে থাকে (একবার বললেই হবে) এবং পরে তাদের দ্বারা আমীন বলানো হয়, শরীয়াতে এটারও কোন ভিত্তি নেই।

কবুলের বলার মাধ্যমে আকদ সম্পাদন হওয়ার পর মজলিস বা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে সামনে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে উচ্চ স্বরে পাত্র যে সালাম করে, তারও কোন ভিত্তি নেই। এরপর বরের কাছ থেকে হাত ধোয়ানোর টাকা, পান পাত্রের পানের সাথে টাকা দিয়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশী টাকা জোর করে আদায় করা বিয়ের ‍সুন্নত এর বহির্ভূত।

আমাদের দেশে ধনী-গরীব সব বিয়েতে সবচেয়ে বেশী প্রচলিত আছে যে কাজটা যে হলো বিয়ের গেইট সাজিয়ে সেখানে বরকে আটকে রেখে টাকা না দেয়া পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এর মত ন্যাক্কার ও গর্হিত কাজ আর হয় না। তাছাড়া বিয়ের সময় যৌতুকের বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রকাশ্য মজলিসে সবাই যাতে দেখতে পারে এমনভাবে রাখা হয়। এটা অন্যায় ও নির্লজ্জতার চরম উদাহরণ।

অনেক সময় বিয়ের আগের দিন বা পরের দিন কনের বাড়ী থেকে ছেলের বাড়ীতে মাছ, মিষ্টি, ফলমূল ইত্যাদি পাঠানো, জামাইকে কাপড়-চোপড় দেওয়া এটাও বিজাতীয় নাজায়েজ প্রথা। আমাদের দেশে এটাকে এতটাই জরুরী মনে করা হয় যে, কনের পিতার সামর্থ্য না থাকলেও প্রয়োজনে ঋণ করে তা দিতে হয়। এটা শরীয়াতের দৃষ্টিতে সীমালঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয়, তাই এসবই বিয়ের ‍সুন্নত এর বহির্ভূত ও গর্হিত কাজ।

বিয়ের অনুষ্ঠানে গান-বাজনা, ছবি তোলা, ভিডিও করা ইত্যাদি মহামারী আকার ধারণ করেছে। বেগানা নারী-পুরুষ এবং যুবক যুবতীদের অবাধে মেলা-মেশা করা ইত্যাদি বিয়ের ‍সুন্নত এর বহির্ভূত। এরকম বেপর্দা আর বেহায়াপনার কারণে নারী পুরুষ সকলেই মারাত্মক গুনাহগার হবে।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেহেতু ইসলামের আদেশ-নিষেধ মেনে চলি, সেহেতু বিয়ের সময়ও বিয়ের ‍সুন্নত গুলো আমাদের মেনে চলা উচিত। তাহলেই সংসার জীবনে বরকত আসবে, আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকবে সারাজীবন

বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য, সেবা, এবং পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন তাসলিমা ম্যারেজ মিডিয়ার সাথে।
কল করুনঃ+880-1407-004393 অথবা +88-01782-006615 এ।
আমাদের মেইল করুন taslima55bd@gmail.com

27 COMMENTS

  1. Fun88 là một trong những trang web cá cược trực tuyến hàng đầu tại Việt Nam. Trang web cung cấp nhiều trò chơi cá cược hấp dẫn như cá độ bóng đá, casino trực tuyến, poker, xổ số và nhiều trò chơi khác. Fun88 cam kết mang đến cho người chơi những trải nghiệm cá cược an toàn, minh bạch và chuyên nghiệp. trang chu fun88

  2. Hey There. I found your blog using msn. This is a really well written article. I will be sure to bookmark it and return to read more of your useful information. Thanks for the post. I will certainly comeback.

  3. I must thank you for the efforts you have put in penning this blog. I’m hoping to check out the same high-grade content from you in the future as well. In truth, your creative writing abilities has inspired me to get my very own blog now

  4. What’s Taking place i am new to this, I stumbled upon this I’ve discovered It positively useful and it has helped me out loads. I’m hoping to give a contribution & help different users like its aided me. Great job.

  5. Howdy! This is my first visit to your blog! We are a team of volunteers and starting a new project in a community in the same niche. Your blog provided us valuable information to work on. You have done a wonderful job!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here