3.3/5 - (3 votes)

বিয়ের পর নতুন সংসার সাজানোর জন্য খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, সোফাসহ আরও কত কিছুই না লাগে! এখনকার নবদম্পতিরা চান নিজের মতো করে নতুন ফার্নিচার দিয়ে সংসার সাজাতে। ছিমছাম উপায়ে ঘরকে কীভাবে আরামদায়ক করে তোলা যায় সেই চিন্তাই থাকে সবার। ঘর সাজানোর জন্য ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে খুব সাধারণ ভুল অনেকেই করে ফেলেন। ঘরের সাজসজ্জা মানুষের ব্যক্তিত্ব ও রুচির পরিচয় বহন করে। তাই অল্প খরচে বাসা সাজানো সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এতে আপনার রুচির প্রকাশটা যেমন ঘটবে, তেমনি আপনার মনটাও থাকবে বেশ ফুরফুরে।

ঘর সাজনোর কথা মাথায় এলেই কিভাবে সাজাবেন, কি কি ফার্ণিচার কিনবেন, কোথায় পাবেন, খরচ কেমন পড়বে ইত্যাদি নানা ধরনের অনেক প্রশ্ন জাগে। কর্মজীবী সদ্যবিবাহিত দম্পতিরা সংসার সাজানোর শুরুতেই এসব নানা ভাবনার সম্মুখীন হয়ে হারিয়ে ফেলেন কূলকিনারা। পোহাতে হয় নানা ঝক্কিঝামেলা। তবে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে সামর্থ্যের মধ্যেই সুন্দর করে সাজানো যেতে পারে নতুন সংসার।

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে রয়েছে যারা নতুন সংসার শুরু করবেন কিন্তু হাতে বাজেট কম, তাদের জন্য রয়েছে কম খরচে খুব সুন্দরভাবে ঘর সাজানোর টিপস।

ঘর সাজানোর জন্য দরকারী ফার্ণিচার লিস্ট

বিয়ের পর নতুন সয়সার সাজানোর আগে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ফার্ণিচারগুলোর লিস্ট বানিয়ে নেওয়া উচিত। বিলাসী পণ্যের দিকে পরে নজর দেবেন। প্রথমে ঘরের কাজকর্ম সব একদম পারফেক্টভাবে করার জন্য যা যা দরকার তার লিস্ট করে ফেলুন। শোবার ঘরের খাট, বসার ঘরের সোফা সেট, খাবার ঘরের টেবিল, কাপড় রাখার ওয়ারড্রব, ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, শো-কেস ইত্যাদি সংসারে সবচেয়ে দরকারী ফার্ণিচার। এসব আসবাব বানিয়েও নিতে পারেন, অথবা শো-রুম থেকেও কিনতে পারেন।

এসব আসবাবপত্রের পরেই প্রয়োজন হবে ফেব্রিকসের। যেমন- পর্দা, কুশনকভার, বিছানার চাদর এর মত প্রয়োজনীয় জিনিস। এছাড়াও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মধ্যে আছেঃ ঘড়ি, লাইট, ফ্যান, ঝাড়ু, পাপোষ, আয়রন, বাথরুমের যাবতীয় জিনিসপত্র যেমন -ব্রাশ-পেস্ট রাখার র‍্যাক, বালতি, মগ রান্নাঘরের সরঞ্জাম ইত্যাদি। আর রান্নাঘরের জন্য লাগবে হাড়ি-পাতিল, গ্যাসের চুলা, কড়াই, চামচ, থালাবাসন, গ্লাস, মসলাদানী, দা-বটি ইত্যাদি।

আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজতে

নতুন সংসারে ইলেকট্রনিক্স আইটেম কি কি লাগবে?

ঘর সাজানোর জন্য এরপর আসি ইলেকট্রনিক্স আইটেমে। ইলেকট্রনিক্স জিনিসের মধ্যে টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, প্রেসার কুকার, রাইসকুকার, মাইক্রো ওভেন গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া এখন ওয়াশিং মেশিনও অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্র। সময় বাঁচাতে টোস্টার, স্যান্ডউইচ মেশিন, ব্লেন্ডার, কফি মেকার, ওয়াটার হিটার কিনতে পারেন।

ঘর সাজানোর জন্য বেডরুমের ফার্ণিচার লিস্ট

বাসার সবগুলো রুমের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘরটি হলো বেডরুম। কারণ দিনের শুরু এবং শেষটা হয় এই বেডরুম থেকেই । বেডরুমের প্রধান ফার্ণিচারই হলো খাট। খাট ছাড়া কি বেডরুম ভাবা যায়? কাঠ, পারটেক্স অথবা স্টিলের তৈরী ভালো মানের খাট এখন পাওয়া যায় খুব কম দামে। খাটের পর বেডরুমের প্রয়োজনীয় ফার্ণিচারগুলো হলো আলনা, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ারড্রব বা আলমারি। বেডরুমের সাইজটা যদি একটু ছোট হয় তাহলে খাটের বদলে ম্যাট্রেস বসিয়ে তার ওপরে ছোট ছোট রঙিন কুশন ছড়িয়ে দিলে দেখতে খুবই ভালো লাগবে।

ঘুমের সময় বই পড়ার অভ্যেস থাকলে খাট বা ম্যাট্রেসেরে পাশে টেবিল ল্যাম্প রাখতে পারেন। খাটের একপাশে দেয়ালের ধারঘেঁষে ছোট একটা শেলফে বই রাখতে পারেন। শোবার ঘরের ড্রেসিং টেবিলটা রাখা উচিত জানালার কাছে। এতে করে সাজগোছ করার সময় আলো নিয়ে কোনো অসুবিধা হবে না। ড্রেসিং টেবিলের পাশে আলনা বা ওয়ারড্রব রাখতে পারেন। শোবার ঘরে জানালার পর্দা ভারী হলে ভালো হয়। ভাইব্রেন্ট কালারের পর্দায় ঘর বেশ উজ্জ্বল দেখায়। সম্ভব হলে বেডরুমেই টিভি রাখতে পারেন।

ডাইনিং রুমে কি ফার্ণিচার লাগবে?

বেডরুমের পরেই আসে ডাইনিং রুম সাজানোর পালা। ডাইনিং রুমের প্রধান ফার্ণিচার হলো ডাইনিং টেবিল। ডাইনিং টেবিলটি হতে পারে ফোর সিটেড অথবা সিক্স সিটেড। বাসা যদি ছোট হয় তাহলে খাবার ঘরে ফোল্ডিং টেবিল ব্যবহার করা উত্তম। ডাইনিং টেবিলের ওপর সবসময় একগুচ্ছ তাজা ফুল রাখলে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ফ্রিজ সাধারণত ডাইনিং রুমেই রাখা হয়।

ঘর সাজানোর জন্য ড্রয়িং রুমের ফার্ণিচার

বাড়িতে অতিথি এলে তাকে যে ঘরে বসানো হয় সেটা হচ্ছে ড্রয়িং রুম বা বসার ঘর। ড্রয়িং রুম বা বসার ঘরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ফার্ণিচার হচ্ছে সোফা। ড্রয়িং রুমের রুমের সাইজ অনুযায়ী সোফা নির্বাচন করবেন। সোফার বদলে এখন অনেকে ডিভান ব্যবহার করছেন। সোফার চেয়ে ডিভান বেশ কম দামে পাওয়া যায়। এছাড়া মেঝেতে ফোম বসিয়ে বা মাদুর বা শতরঞ্জি পেতে তার ওপর বড় কুশন সাজিয়ে দেয়া যেতে পারে। বেডরুমের পরিবর্তে চাইলে বসার ঘরে টিভি রাখতে পারেন।

ড্রয়িং রুমরে দেয়ালে বিভিন্ন পেইন্টিংসও ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। সাথে যোগ করতে পারেন টি-টেবিল, ফুলদানি, ওয়াল পেপার বা ওয়াল স্টিকার। ঘরের দেয়াল যদি বড় হয় তাহলে বড় ক্যানভাস, ঘড়ি এবং কার্পেটের সঙ্গে মিল রেখে জানালায় পর্দা এবং কুশন রাখলে বেশ সুন্দর দেখাবে।

ঘর সাজানোর টিপস- রান্নাঘর সাজাবেন কিভাবে?

ছোট বাসা এবং ছোট সংসার হলে ঘরে বাড়তি কোনো খাবার টেবিল না রেখে কিচেনের সঙ্গে কিচেন টপের ব্যবস্থা করে দুজনে আরামে বসে খেতে পারবেন। ঘরে ছোটখাটো পার্টির কাজটাও সারতে পারবেন এর মাধ্যমে। এতে ঘরে জায়গা কম লাগবে। কিচেন ক্যাবিনেট, কিচেন কাউন্টার, কিচেন সিংক, গ্যাসের চুলা, হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন এবং মসলার কৌটা রাখার জন্য র‌্যাক বা শেলফ সবকিছুই থাকা চাই রান্নাঘরে।

ঘর সাজানোর সময় বারান্দায় কি রাখবেন?

বাসার বারান্দায় সাইজ অনুযায়ী ইজি চেয়ার ও একটি টি-টেবিল রাখলে আকর্ষণীয় মনে হবে। অবসরে গান শোনা কিংবা বই পড়ার জন্য ব্যালকনিতে রকিং-চেয়ারও রাখতে পারেন। বারান্দার সিলিং থেকে ঝুলন্ত টবে আপনার পছন্দের গাছ রাখতে পারেন। গাছ আপনার বাসাকে রঙিন ও জীবন্ত করে তুলবে। যদি বাগান করার শখ থাকে তাহলে পুরোনো বোতল কেটে বা টিনের কৌটায় অথবা কাচের ছোট জারে ছোট ছোট গাছ, পাতাবাহার বা ক্যাক্টাস গাছ এনে সাজাতে পারেন। সম্ভব হলে বারান্দার ইনডোর প্লান্টসের সঙ্গে রাখুন একটি দোলনা।

ঘর সাজানোর জন্য পর্দা এবং কুশন কভার

ঘরের আরেকটি বিশেষ অনুষঙ্গ হল পর্দা। ঘরে স্নিগ্ধতা আনতে পর্দাকেই সবার আগে বেছে নেয়া হয়। ঘরের দেয়ালের রং, আকার ও আয়তন বুঝে হালকা ও উজ্জ্বল রঙের পর্দা লাগাতে পারেন। হলুদ, কমলা, লাল, সবুজ বা কালচে লাল রঙের ফ্লোরাল প্রিন্ট বেছে নিতে পারেন পর্দার ক্ষেত্রে। আর পর্দার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বসার ঘরের কুশন কভারও বানিয়ে নিতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ফ্লোরাল প্রিন্টের। সোফার কভারের ক্ষেত্রে যদি ফ্লোরাল প্রিন্ট ব্যবহার করতে না চান তাহলে এক্ষেত্রে একটু গাঢ় রং বেছে নিন। আবার চার-পাঁচটি রঙ এর কুশন কভারও ব্যবহার করতে পারেন।

ঘরের দেয়াল হালকা রং করলে ঘর বেশ উজ্জ্বল দেখায়। যেহেতু নতুন সংসার এমনিতেই ভালোবাসায় ভরপুর থাকে, তাই উজ্জ্বল রঙই ঘরকে আরো বেশি প্রাণবন্ত করে রাখে। ঘরে রঙ করতে চাইলে স্কাইব্লু, পিচ, বা লাইট ইয়েলো রঙ বেছে নিতে পারেন।

শো-পিস এবং অন্যান্য জিনিস

প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দিয়ে ঘর সাজানোর কাজটা হয়ে গেলে যদি হাতে টাকা থাকে তাহলে ছোট ছোট কিছু শো-পিস দিয়ে ঘরের সৌন্দর্য আরো বাড়াতে পারেন। এজন্যও খুব বেশি খরচ হবে না। জমিয়ে রাখা নুড়ি পাথর, ঝিনুক বা মার্বেল অথবা জমানো ডাকটিকিটগুলো একটা কাঁচের পাত্রে সাজিয়ে রাখতে পারেন। এতে আপনার ঘর হবে একটু ভিন্নভাবে সজ্জিত এবং ঘরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে।

ঘরে শান্তিময় পরিবেশ রাখার জন্য কিংবা মিষ্টি টুংটাং শব্দ শোনার জন্য বেডরুমে বা বসার ঘরের জানালাতে উইন্ড চাইম ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। একটি মাত্র উইন্ড চাইমই ঘরের আবেদন অনেকখানি বাড়িয়ে দিতে পারে।

ঘরে সুন্দর লাইটিং অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্প হোড, হ্যাংজিং লাইট, ঝাড়বাতি ও মোমবাতি ব্যবহারেও তৈরি করতে পারেন নান্দনিক পরিবেশ। এ ছাড়া ঘরের বিভিন্ন কোণে ইনডোর প্লান্টসও রাখতে পারেন। সুন্দর ডিজাইনের ফুলদানি, সুগন্ধি মোম, লণ্ঠন ইত্যাদিও কিনতে পারবেন বেশ অল্প দামেই।

কম খরচে সুন্দরভাবে ঘর সাজানোর টিপস

আগেই বলেছি ঘর সাজানোর জন্য প্রথমেই বিলাসী জিনিসপত্র কিনবেন না। নতুন সংসারে যে জিনিসের প্রয়োজন বেশি তা আগে কিনতে হবে যেমন, খাট, চেয়ার, টেবিল, আলমারি ইত্যাদি। এগুলো যেহেতু প্রাথমিক চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন তাই এগুলো আগে কিনতে হবে এবং পরে অন্যান্য জিনিস নিতে হবে। আবার একেবারে শুরুতেই বেশি আসবাব কেনা উচিত নয় কারন ভবিষ্যতে বাসা বদলের প্রয়োজন হলে বেশী ফার্ণিচার সরাতে বেশ সমস্যায় পরতে হবে। আর বাজেট কম থাকলে নতুন সংসারের ক্ষেত্রে সেকেন্ডহ্যান্ড আসবাবপত্র কেনা ভালো, এতে খরচও বাঁচবে আবার প্রয়োজন ও মিটবে।

খরচ কমাতে কাঠ বাদে অন্যান্য পারটেক্স, স্টিল, এবং প্লাস্টিকের আসবাব কিনতে পারেন। দেয়াল আলমারি করতে পারেন, দেয়ালে তাক বানাতে পারেন বই বা অন্যান্য জিনিস রাখার জন্য। ড্রেসিং টেবিল না বানিয়ে দেয়ালে আয়না লাগাতে পারেন। ঘরের প্রতিটি ফার্নিচার অনেক ভেবেচিন্তে নির্বাচন করুন। ফার্নিচার কেনার সময় দু’জনের মতামতকে সমান প্রাধান্য দিন। আর ফার্নিচার কেনার সময় ঘরের আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কিনলে ঘরটা বেশ খোলামেলা থাকবে এবং আলো-বাতাস চলাচল করবে।

ঘর সাজানোর শেষ কথা

ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে একটু বুদ্ধি আর সৃজনশীলতা আপনার ব্যক্তিত্ব আর রুচিশীলতাকে ফুটিয়ে তুলবে। ঘর এমনভাবে সাজানো উচিৎ যাতে সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরলেও মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। আপনি আপনার ঘর যেভাবেই সাজান না কেন, তা যেন কোন ভাবেই আপনার স্বাচ্ছন্দ্যকে নষ্ট না করে, সে দিকটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন। তাছাড়া বিয়েতে সবকিছু মিলিয়ে এমনিতেই অনেক খরচ হয়। এজন্য চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব প্ল্যান করে প্রতিটি কাজ করতে। খুব বেশি খরচ না করে ভালোবাসার দৃঢ় গাঁথুনিতেই সজ্জিত হতে পারে ছোট্ট নতুন সংসার। তার জন্য দরকার পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতা, শ্রদ্ধাবোধ এবং বিশ্বাস।

বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য, সেবা, এবং পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন তাসলিমা ম্যারেজ মিডিয়ার সাথে।
কল করুনঃ+880-1407-004393 অথবা +88-01782-006615 এ।
আমাদের মেইল করুন taslima55bd@gmail.com

3 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here