5/5 - (1 vote)

বিয়ের পর সব ঝামেলা আর ধকল কাটিয়ে একটু নিরিবিলিতে প্রিয় মানুষটির সান্নিধ্য আর নিজেদের পারস্পরিক বোঝাপড়াটা আরও শক্ত করে নিতে নব দম্পতিদের সবথেকে বেশি প্রয়োজন হানিমুন। হানিমুন মানেই একটা স্পেশাল ব্যাপার। আকর্ষণীয় সব জায়গাগুলোতে ভ্রমণ, রোমান্টিক ডিনার আর প্রিয়জনের সাথে একান্ত কিছু সময়- সব মিলিয়ে হানিমুন এ সবকিছু একটু বেশিই স্পেশাল।

একসময় বাংলাদেশে নব দম্পতিদের হানিমুন বলতে বোঝানো হতো কক্সবাজার, রাঙামাটি আর থাইল্যান্ড ঘুরতে যাওয়াকে। সেই গল্প এখন পাল্টে গেছে। সারাজীবন মনে রাখার মত স্বপ্নময় হানিমুন তো সেটাই যেখানে সমুদ্র সৈকতে দুজন-দুজনার হাতে হাত রেখে শুয়ে থাকা, সমুদ্রকে পাশে রেখে মোহনীয় ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ বাংগি জাম্পিং, প্যারাগ্লাইডিং, জিপলাইনিং আর সাফারির মতো মাথা নষ্ট করা অ্যাক্টিভিটি থাকবে!

দুজন দুজনকে জানার জন্য, আরও কাছে আসার জন্য মধুচন্দ্রিমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হানিমুন বা মধুচন্দ্রিমা হওয়া উচিত ’পারফেক্ট’, তা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন। এজন্য প্রয়োজন জাস্ট একটা সুন্দর পরিকল্পনা আর ফুরফুরে মেজাজ আর ঝামেলা মুক্ত গন্তব্য।

হানিমুন এ যাবার আগে অবশ্যই একটা প্ল্যান থাকতে হবে, কবে যাবেন, কোথায় যাবেন, কত দিন থাকবেন, কী কী করবেন, ইত্যাদি। নিজেদের বাজেটের মধ্যেই কিভাবে হানিমুনে যাবেন আর কিভাবে কি প্ল্যান করবেন তা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা-

পছন্দের লোকেশন বেছে নিন

হানিমুন এর প্রস্তুতির শুরুতেই ঠিক করে ফেলুন কোথায় যাবেন। নিজেদের পছন্দের জায়গাগুলো লিস্ট করে ফেলুন। দুজনেরই পছন্দের জায়গা, দর্শনীয় স্থান আছে এমন জায়গাগুলোই বেছে নিন। যেখানে গেলে মনে হয় নিজেরা কম্ফোর্টেবল থাকতে পারবেন এমন জায়গাই পছন্দ করুন মধুচন্দ্রিমার জন্য। আবার হানিমুনে যাবেন বলেই যে খুব দূরেও কোথাও যেতে হবে তা কিন্তু নয়। আপনি কাছে পিঠে কোথাও ভাল স্পট খুঁজে নিয়েও হানিমুন করে আসতে পারেন। যেহেতেু বিয়ের পরপরই হানিমুন এ যাওয়া হয়, তাই আপনার বিয়ের তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে জেনে নিন, ওই সময়টায় কোথায় কেমন আবহাওয়া থাকতে পারে।

আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজতে

বাজেট নির্ধারণ করুন

এবার আসি বাজেটের কথায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ঠিক করুন, কে কত টাকা হানিমুন বাবদ খরচ
করতে পারবেন। দুজনে মিলে শেয়ার করলে হানিমুন ভালো ও সচ্ছলতার সাথে করে আসতে পারবেন।
বিয়ের আগে থেকেই হানিমুনের জন্য আলাদা করে কিছু টাকা রেখে দিন যাতে বিয়ের খরচের পর হানিমুন নিয়ে চিন্তা করতে না হয়। আবার বিয়েতে পাওয়া গিফট এবং টাকা দিয়েও কিন্তু হানিমুনের খরচ নিতে পারেন। সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নিয়ে ফেলুন প্রথমেই। পারলে পরিবারের সঙ্গেও আলাপ করে নিন।

আগে থেকেই বুকিং দিন

হানিমুন এ যদি দেশের বাইরে যান তাহলে আগে থেকেই টিকিট বুকিং দিন, এতে অনেক কম খরচে টিকিট পাবার সুবর্ণ সুযোগ পাবেন। পাসপোর্ট, হোটেল বুকিং এবং ভিসা-সংক্রান্ত কাজগুলো সময় থাকতে সেরে ফেলুন। কিছু কিছু দেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়ার সুবিধা থাকায় ভিসা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। তারপরও দেখা যায়, পাসপোর্ট, ছবি, এয়ারটিকিট বুকিং এই সম্পর্কিত কিছু কাজ জমা হয়ে যায়। সুতরাং আগে থেকেই এগুলো গুছিয়ে রাখলে চিন্তামুক্ত হওয়া যায়, প্রয়োজনে ট্রাভেল এজেন্সীর সাহায্য নিতে পারেন।

গোছগাছ শুরু করে দিন

এরপর শুরু করুন হানিমুন এর জন্য গোছগাছ। হানিমুন এ যেতে কী কী কেনার আছে, লিস্ট করে কিনে ফেলুন। হানিমুন এর জন্য হালকা লাগেজ, হানিমুন ডেস্টিনেশনের আবহাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জামাকাপড়, জুতা, হেডফোন, ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা, পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে লাগেজ গুছিয়ে ফেলুন। এর সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রসাধনী, কসমেটিকস, সানস্ক্রিন ইত্যাদি কিনে ফেলুন, সঙ্গে প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু ওষুধ নিতে ভুলবেন না।

দরকারি কাগজপত্র

ভ্রমণের টিকিটসহ বাকি সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফটোকপি করে রাখুন। মানি ট্রানজেকশনের কাজ থাকলে সেরে ফেলুন, সঙ্গে যে হ্যান্ডব্যাগটা সঙ্গে নেবেন, টিকিট এবং যাবতীয় কাগজ এখনই সেটায় রেখে দিন। হোটেলগুলোর নম্বর ফোনবুক ছাড়াও ডায়েরিতে আলাদাভাবে লিখে রাখুন। ব্যাংক এবং এয়ারলাইনসের যাবতীয় কাজ সেরে ফেলুন। ভ্রমণটা যদি দেশে হয় তাহলে বাসে অথবা ট্রেনের টিকিট করে ফেলুন।

হানিমুন এর ফাইনাল চেকিং

ফাইনাল বুকিং দেবার আগে বাজেট, তারিখ সবকিছু আরেকবার চেক করে নিন। যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার হোটেলগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। যদি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার ব্যাপার থাকে সেক্ষেত্রে ট্রান্সপোর্ট কী হবে তা ঠিক করে রাখুন। শেষ সময়ে কিছু কেনাকাটার দরকার হলে করে নিন। দরকার হলে ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে সবকিছু আরেকবার ঝালাই করে নিন।

তাড়াহুড়া করবেন না, রিল্যাক্স থাকুন

হানিমুন এ রওনা দেবেন এমন সময়ে, যাতে এয়ারপোর্ট কিংবা ট্রেন অথবা বাসস্টেশনে পৌঁছে যথেষ্ট সময় হাতে থাকে। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হয়ে যদি ছোটখাটো কিছু মিস করে থাকেন, তাহলে অস্থির হবার কিছু নেই। প্রচুর পানি পান করুন। বিয়ের ধকল সামলে জার্নি শুরু করেছেন। সুতরাং ফুরফুরে আর সতেজ থাকবেন। নতুন জায়গায় বুঝেশুনে যাবেন। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানকার লোকাল পুলিশ হেল্পলাইনটা জেনে নিন।

হানিমুন এ প্রিয়জনের জন্য নিজেকে সাজিয়ে তুলুন

হানিমুনে গিয়ে সবাই নিজেকে একটু অন্যভাবে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। প্রত্যেকেই চেষ্টা করেন। এর জন্য দরকার প্রোপার সাজগোজ। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। এতে ত্বক ভাল থাকবে। নিজেকে উজ্জ্বল দেখাতে চাইলে হালকা করে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। আর অবশ্যই নিজের স্কিন টোনের সঙ্গে ম্যাচ করে ফাউন্ডেশন লাগাবেন।

চোখে একটু মোটা করে আইলাইনার, মাস্কারা লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে অনেক বেশি করে নিজেকে হাইলাইট করতে পারবেন। ঠোঁটে হালকা করে লিপগ্লস লাগিয়ে নিন। বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না।

আবার মেকআপ অবস্থায় একদম ঘুমাতে যাবেন না। রাতে ঘুমানোর সময় স্কিন রিমুভাল দিয়ে মেক আপ মুছে তারপর শোবেন। রাতের বেলা নাইট ক্রিম অবশ্যই লাগাবেন। আর যাদের ত্বক রুক্ষ প্রকৃতির তারা সবসময় ময়েশ্চারাইজার সঙ্গে রাখবেন।

হানিমুন এ যে কাজগুলো একেবারেই করা যাবে না

যেহেতু হানিমুন মাত্রই একদম আনকোরা নতুন একটা অভিজ্ঞতা, তাই কিছু ভুল করে ফেলেন কমবেশি সবাই। প্রথম হানিমুন এমন একটা জিনিস যে কাজে অভিজ্ঞতা অর্জনের কোন সুযোগ নেই। তাই জেনে রাখুন হানিমুন এ যে কাজগুলো একেবারেই করা যাবে না।

১. হানিমুন মানেই যৌন সম্পর্ক নয়। বরং নিরিবিলি একান্ত সময়ে পরস্পরকে জেনে ও বুঝে নেয়ার নামই হানিমুন। তাই হানিমুনে গিয়ে স্ত্রীকে শারীরীক সম্পর্কের জন্য পীড়াপীড়ি করবেন না। আবার পরস্পরের অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়েও আলোচনা করবেন না। অতীতে যা ছিল, সেটা অতীতেই থাকুক।

২. সারাক্ষণ শুধু হোটেলের রুমে বসে থাকবেন না। বরং স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে বেড়ান, ছবি তুলুন, সুন্দর সময় কাটান। সদ্য মা-বাবা-পরিবারকে ছেড়ে এসে স্বভাবতই আপনার স্ত্রীর মন খারাপ লাগতে পারে। তাই চেষ্টা করুন স্ত্রীকে সময় দিতে, তার মন জয় করে নিতে। আপনার স্ত্রী যেন একাকীত্ব অনুভব না করে।

৩. একবারই তো হানিমুনে যাবেন, তাহলে কিপটামি করবেন কেন? বরং জীবনের এই অভিজ্ঞতাকে স্মরণীয় রাখতে সাধ্যের মাঝে সবটুকু খরচ করুন, টুকিটাকি শপিং করুন। আগে থেকেই শপিংয়ের একটা তালিকা করে নিন। এতে করে খুব বেশি খরচও থাকবে হাতের নাগালেই।

এখনকার দিনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার মতোই হানিমুনটাও কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায় অনেকে বিয়ের বাজেট কমিয়ে দেন শুধুমাত্র হাত খুলে হানিমুনটা শেষ করার জন্য। যাই হোক হানিমুনে রিল্যাক্স করতে একদমই ভুলবেন না। খেয়াল রাখবেন, আপনার হানিমুন যেন ক্লান্তিকরভাবে শেষ না হয়। হানিমুন এর প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করুন, যথাসম্ভব সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।

বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য, সেবা, এবং পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন তাসলিমা ম্যারেজ মিডিয়ার সাথে।
কল করুনঃ+880-1407-004393 অথবা +88-01782-006615 এ।
আমাদের মেইল করুন taslima55bd@gmail.com

4 COMMENTS

  1. Wow, marvelous blog format! How lengthy have you been running a
    blog for? you made running a blog look easy. The whole glance
    of your website is wonderful, let alone the content!

    You can see similar here sklep online

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here