4.1/5 - (15 votes)

মহান রাব্বুল আলামিনের সকল নিয়ামতের মধ্যে সবচাইতে তীব্র আনন্দের নিয়ামত স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন। বৈধ ও ইসলামিক নিয়মে যৌন মিলন পার্থিব জীবন উপভোগ ও সন্তান-সন্ততি লাভের সাথে সাথে পরকালীন পাথেয় হাসিল করার মাধ্যম। কিন্তু আমরা অনেকেই ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক সহবাসের নিয়ম বা পন্থা সম্পর্কে জানি না। আজকের পোস্টে আমরা স্বামী-স্ত্রী সহবাস এর এর দোয়া, সহবাসের ইসলামিক নিয়ম ও কিছু প্রচলিত কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করবো।

সহবাস এর আগে পূর্ব প্রস্তুতি

দাম্পত্য সম্পর্কে সবচেয়ে মধুর কাজটি হলো স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন। স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসার তীব্রতম প্রকাশ হচ্ছে শারীরিক সম্পর্ক। সহবাসের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের যত সান্নিধ্য লাভ করতে পারে, তা অন্য কোনভাবে সম্ভব নয়। তবে সহবাসের আগে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই কিছু করণীয় রয়েছে।

সহবাসের আগে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। স্বভাবগতভাবে মানুষ পরিচ্ছন্নতা প্রিয়। তাই সহবাসের আগে পরিচ্ছন্ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের অবাঞ্চিত অংশ যেমন বগল ও নাভির নিচের লোম, নখ ইত্যাদি কেটে রাখতে হবে। সহবাসের আগে ভালো সুগন্ধিময় পারফিউম ব্যবহার করা। সুগন্ধি আপনার সঙ্গীকে মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখবে এবং তা সহবাস করার আগ্রহ জন্মাবে। হযরত আয়িশা (রা) বলেন-

‘আমি রাসূল (সা)- কে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম। অতপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে গমন করতেন।’

যৌন মিলন করার সময় সঙ্গীর সাথে অন্য কোনো পুরুষ বা মহিলার রূপ সৌন্দর্যের প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এটা সঙ্গীর জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। মানুষ তার প্রিয়জন থেকে নিজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে। তাই বিশেষ মুহূর্তে স্ত্রীর প্রশংসা করলে তা স্ত্রীকে বহুগুণ বেশি প্রভাবিত করবে। তার মন ও শরীরকে প্রফুল্ল করে তুলবে।

সহবাসের আগে মুখে দুর্গন্ধ থাকলে সেটা দূর করতে হবে। এজন্য যৌন মিলনের আগে দাঁত ও মুখ পরিস্কার করে নিতে হবে। সামান্য পরিমাণ হালকা মিষ্টি ও ঝাঁঝালো ফ্লেভারযুক্ত খাবার যেমন দারুচিনি, লবাঙ্গ, খেজেুর ইত্যাদি খাওয়া ভালো। এ ধরণের খাবার কণ্ঠ ও জিহবাকে সতেজ করবে। আর স্ত্রীর উচিত সহবাসের রাতে সাজসজ্জা ও পোশাকের ব্যাপারে স্বামীর পছন্দের গুরুত্ব দেয়া। এজন্য অন্যান্য দিনে অন্তর্বাস পরিধান না করলেও সহবাসের রাতে অন্তর্বাস পরিধান করলে স্বামী মিলনের সময়ে বাড়তি উত্তেজনা অনুভব করে।

আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজতে

সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম

মহান রাব্বুল আলামিন বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষের যৌন মিলন তথা বংশবৃদ্ধিকে কল্যাণের কাজে পরিণত করেছেন। বংশবৃদ্ধির একমাত্র মাধ্যমে হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস। আর ইসলামে সহবাসের রয়েছে কিছু নিয়ম-নীতি ও দোয়া যা সুস্থ যৌন মিলন এবং বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক। স্বামী-স্ত্রী সহবাসের আগে নিচের দোয়াটি পড়ে নিবেন-

‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।’

যে ব্যক্তি সহবাসের ইচ্ছা করে, তার নিয়ত হতে হবে ব্যভিচার থেকে দূরে থাকা। এই নিয়তে সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই সওয়াব তো হবে এবং নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হবে। দোয়া পড়ার পর স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে আলিঙ্গন করবেন। স্ত্রীকে আস্তে আস্তে চুম্বন এবং স্পর্শকাতর স্থানে হাত বুলানোর মাধ্যমে উত্তেজিত করে তুলতে হবে। এটা সহজে স্ত্রীর অরগ্যাজম হতে সহায়তা করবে। উভয়ের মনের সহবাসের পূর্ণ আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলে তখন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করবেন।

বেশীরভাগ সময়ে স্বামী উত্তেজিত হয়ে পড়লে তার একমাত্র লক্ষ্য থাকে স্ত্রীর যোনিপথে প্রবেশ, অন্য কিছুর ধৈর্য্য তার তখন থাকে না। কিন্তু এতে স্ত্রী পরিপূর্ণ সুখ পায় না। এজন্য স্বামীরও উচিত ধৈর্য ধরে স্ত্রীকে চিৎ স্বামীকে আলিঙ্গন ও চুম্বনের মাধ্যমে তার ভেতরের সত্তাকে জাগ্রত করে তোলা। আর স্ত্রীর উচিত স্বামীর সর্বাঙ্গে হাত বুলানো, চুম্বন করে, গলার নিচে, বুকে, বাহুতে ও পিঠে চুম্বন করা।

সহবাসের পজিশনের ক্ষেত্রে ইসলাম কোনো বিধি নিষেধ আরোপ করেনি। এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী তাদের সুবিধা ও ইচ্ছাকে প্রধান্য দিতে পারবে। তবে স্ত্রী নিচে থাকবে এবং স্বামী তার উপরে থাকবে এই পন্থাই সবচেয়ে বেশী আরামদায়ক। এতে স্ত্রীরও কষ্ট সহ্য করতে হয় না এবং গর্ভধারণের জন্যেও তা উপকারী।

যৌন মিলনের পর দুজনের বীর্য বের হওয়ার পর কিছু সময় নড়াচড়া না করে মিলিত অবস্থায় থাকতে হবে। এতে বীর্য জরায়ুতে ঠিক মত প্রবেশ করতে সুবিধা হয়। স্বামীর যদি অরগ্যাজম আগে হয়ে যায় তাহলে সে স্ত্রীর অরগ্যাজম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। দিনে বা রাতে স্বামী স্ত্রীর যখনই সুযোগ হয়, তখনই সহবাস করা যাবে। তবে কোনো আলেমের মতে, জুমআর দিন সহবাস করা মুস্তাহাব।

সহবাস এর পরে করণীয়

সহবাসের পর স্বামী-স্ত্রী দুজনের যৌনাঙ্গ হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ঠাণ্ডা পানিতে ধোয়া উচিত নয়। তারপর স্বামী-স্ত্রী দুইজনে কিছু মধু সেবন করে নিবেন। সহবাস শেষ করে দেরি না করে গোসল করে নিতে হবে। তবে কেউ যদি গোসল করতে না চায় তাহলে ওযু করে ‍ঘুমানোর অনুমতি আছে। সহবাসের পর স্বামী যদি বেশীক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর দায়িত্ব হলো ফজরের নামাযের জন্য স্বামীকে জাগিয়ে দেয়া। যদি স্বামী অবহেলা করে নামাজ না পড়ে তাহলে স্বামীর গুনাহ হবে।

প্রথমবার সহবাস শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়বার সহবাস করতে ইচ্ছা হলে তার আগে ওযু করে নেওয়া মুস্তাহাব। রাসূল (সা) বলেছেন-

‘তোমাদের কেউ সহবাস করার পর যদি দ্বিতীয়বার সহবাস শুরু করতে চায় তাহলে সে যেন ওযু করে নেয়। এটা তার দ্বিতীয় সহবাসকে স্বাদময় করবে।’

সহবাসের কিছু নিষিদ্ধতা

শরীয়তসম্মত ভাবে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা সওয়াবের কাজ। মহান রাব্বুল আলামিন এতে অনেক খুশি হন। কিন্তু সহবাসের কিছু নিষিদ্ধ সময় ও পন্থা রয়েছে যা প্রত্যেক বিবাহিত নর-নারীর জানা অত্যন্ত জরুরী। প্রথমত মাসিক বা পিরিয়ডকালীন সময়ে সহবাস করা সম্পূর্ণ হারাম। মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন-

“তোমরা ঋতু বা মাসিক কালে স্ত্রী সঙ্গম বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য) তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (সূরা বাকারাঃ ২২২)

এছাড়া পায়ুপথ বা মলদ্বার দিয়ে স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন করা হারাম। নবীজি হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন-

“যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে মলদ্বারে সঙ্গম করে, রাব্বুল আলামিন তার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকান না।”

স্ত্রী সহবাস করার সময় নিজের স্ত্রীর রূপ-লাবণ্য, স্পর্শ-চুম্বন ছাড়া অন্য কোনো স্ত্রীলোকের বা অন্য সুন্দরী মহিলার রুপের কল্পনা করা বা তার সাথে যৌন মিলন করার চিন্তাও করা যাবে না। এতে স্বামীকে গুণাহগার হতে হবে। দিনের বেলায় রোজা রেখে সহবাস করা নিষিদ্ধ। তবে ভুলবশত করে ফেললে তার কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা হলো একটানা দুইমাস রোযা রাখতে হবে অথবা ষাট জন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে।

অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে সহবাস করা যাবে না। কারণ এতে অসুখ আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া হজ্জ্ব বা ওমরার ইহরাম অবস্থায় যৌন মিলন করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন-

“সুবিদিত মাসে (শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জ্ব এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ না করে।” (সুরা বাকারাঃ ১৯৭)

গর্ভকালীন সময়ে সহবাস করা যাবে কি-না?

ইসলামে গর্ভাকালীন সময়ে সহবাস করতে নিষেধ করে নি। তবে গর্ভাবস্থায় সহবাস করতে অনেকে ইতস্তবোধ করে থাকেন। আবার অনেক নারী সহবাসের কারণে তার গর্ভের সন্তান কোনো ক্ষতির সম্মুখিন হয় কি না সে চিন্তাও করেন। কিস্তু গর্ভবতী নারী যদি কোনো ক্ষতির সম্মুখিন না হয় তাহলে তার সাথে সহবাস করতে অসুবিধা নেই।

গর্ভকালীন সময়ে তলপেটে ব্যথা এবং গর্ভাশয় থেকে রক্ত পড়া স্বাভাবিক বিষয়। তাই এই বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া এ সময় অনেক নারীর সহবাসের ইচ্ছা কমে যায়। তাই স্ত্রীর ইচ্ছা ছাড়া জোরপূর্বক যৌন মিলন করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

রমজান মাসে সহবাসের নিয়ম

রোজা রেখে দিনের বেলায় যৌন মিলন করলে রোজা ভেঙ্গে যায়, এ কারণে ইফতারির পর থেকে শুরু করে সেহরির আগ পর্যন্ত যে কোন সময় যৌন মিলন করা যায়। তবে রমযানের দিনের বেলায় স্বামী স্ত্রী পাশাপাশি ঘুমানো, আদর সোহাগ, চুমু দেয়া, স্তন মর্দন ইত্যাদি জায়েয। কিন্তু তা অবশ্যই হতে হবে বীর্যপাত ব্যতীত। ফরজ রোযা পালনকারী স্বামী-স্ত্রীর এমন কিছু করা জায়েয হবে না যাতে করে বীর্যপাত হয়ে যায়। কিছু লোক আছে যাদের বীর্যপাত দ্রুত হয়ে যায়। এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ফরজ রোযা পালনকালে স্ত্রীকে চুম্বন করা, আলিঙ্গন করা ইত্যাদি থেকে তাকে সাবধান থাকতে হবে।

সহবাস সম্পর্কিত কিছু ভুল ধারণা ও কুসংস্কার

আমাদের সমাজে সহবাস সম্পর্কিত কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকে আবার এই ধারণাগুলোকে শরীয়তসম্মত বলে প্রচার করে মানুষের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। তাই ফিতনা থেকে বাঁচতে যৌন মিলন সম্পর্কিত এইসব ভুল ধারণা ও কুসংস্কার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন-

  • সহবাস সম্পর্কিত প্রথম ভুল ধারণা হলো রাত্রি দ্বি-প্রহরের আগে সহবাস করা যাবে না
  • ফলবান গাছের নিচে সহবাস করা যাবে না
  • রবিবারে সহবাস করা যাবে না
  • বুধবারের রাত্রে স্ত্রীর সহবাস করা যাবে না
  • চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে স্ত্রী সহবাস করা যাবে না
  • স্ত্রীর জরায়ুর দিকে চেয়ে সহবাস করলে চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটি ধারণা
  •  বিদেশ যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রী সহবাস করা যাবে না। এই কথার কোনো ভিত্তি নেই
  • উলঙ্গ হয়ে সহবাস করা যাবে না
  • জোহরের নামাজের পরে স্ত্রী সহবাস করা যাবে না
  • ভরা পেটে যৌন মিলন করা যাবে না
  • উল্টাভাবে সহবাস করা যাবে না
  • স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস করা যাবে না
  • পূর্ব-পশ্চিম দিকে শুয়ে সহবাস করা যাবে না

এছাড়া সহবাস সম্পর্কে আরও অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং এগুলো কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। মহান রাব্বুল আলামিন এই সমস্ত কুসংস্কার থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন।

বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য, সেবা, এবং পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন তাসলিমা ম্যারেজ মিডিয়ার সাথে।
কল করুনঃ+880-1407-004393 অথবা +88-01782-006615 এ।
আমাদের মেইল করুন taslima55bd@gmail.com

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here