5/5 - (2 votes)

বৈধভাবে নিকাহ বা বিয়ে সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশে মুসলিম বিয়ের আইন অনুযায়ী কয়েকটি শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে। আজকের এই পোস্টে একজন মুসলিম পুরুষ কোন প্রেক্ষাপটে কতটি বিয়ে করতে পারেন, বাংলাদেশে বিয়ের আইন, ডিভোর্স বা তালাকের সংক্ষিপ্ত আইন, বহু বিবাহ, বাল্য বিবাহ এবং শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

বাংলাদেশে মুসলিম বিয়ের আইন

বিয়ের বয়স

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেক সাবালক নাগরিকের নিজের স্বাধীনতায় বিয়ে করার পূর্ণ অধিকার আছে। বাংলাদেশের মুসলিম বিয়ের যে আইন আছে সে অনুযায়ী বরের বয়স কমপক্ষে ২১ এবং কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ হওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া বর ও কনে উভয়কে সুস্থ মস্তিষ্কের হতে হবে। এর কম বয়সে বিয়ে করাকে আইনী সমর্থন দেয়া হয় না এবং তা “বাল্যবিবাহ” হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে বাল্যবিবাহ আইনত অপরাধ। যদিও সম্প্রতি বিয়ের বয়স নিয়ে বেশ কিছু নতুন আইন এসেছে যেগুলো নিচে আলোচনা করেছি।

বিয়ের প্রস্তাব বা ইজাব

একটি বৈধ বিবাহ সম্পাদনের জন্য বর কনেকে প্রস্তাব দেবে, যাকে ইজাব বলা হয়। বিয়ের আইন অনুযায়ী, একটি পক্ষ প্রস্তাব করার পর অপর পক্ষ স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করলে তবেই বিয়ে বৈধ হবে। কোনো সুস্থ মস্তিস্ক ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর বা নারীর বিয়ে যদি তার সম্মতি ব্যতিরেকে করা হয়, তাহলে ওই বিয়ে বৈধ বিবাহ বলে গণ্য হবে না।

বিয়ের সাক্ষী

মুসলিম বিয়ের আইন মেনে বিবাহ করতে হলে, বিয়ের সময় সাক্ষীদেরও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। হানাফি মত অনুসারে বিয়ের সাক্ষী সম্পর্কে দুজন সুস্থ মস্তিষ্কের প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা হলেই চলবে। একজন পুরুষকে একটি পূর্ণ সাক্ষ্য এবং সাক্ষী হিসেবে একজন নারীকে একজন পুরুষের অর্ধেক ধরা হয়েছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, একজন পুরুষের সাক্ষ্য দুজন নারী সাক্ষ্যের সমান নয়। অর্থাৎ সাক্ষী হিসেবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ থাকা আবশ্যক।

বিয়ের দেনমোহর

বিয়ের আইন অনুযায়ী, একজন নারীকে বিয়ে করতে হলে “দেনমোহর” দেয়া বাধ্যতামূলক। দেনমোহর নিয়ে আগের ব্লগে অনেক আলোচনা করেছি। সংক্ষেপে বলতে গেলে, দেনমোহর হচ্ছে একটি আর্থিক নিশ্চয়তা যার বিনিময়ে একজন নারী তার বিবাহিত পুরুষ সঙ্গীর জন্য হালাল বা হন। এই আর্থিক নিশ্চয়তা কিছু পরিমাণ অর্থ কিংবা সম্পত্তি দিয়ে নিষ্পন্ন করা যায়। মুসলিম বিয়ের আইন এ বলা হয়েছে, দেনমোহর বিয়ের সময়ই সম্পূর্ণটা আদায় করে দিতে হয়, দেনমোহর মাফ হয় না।

আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজতে

মুসলিম বিয়ের আইন এ রেজিস্ট্রেশন খরচ কত?

মুসলিম বিয়ের আইন এ, পাত্রপক্ষ পাত্রীকে যা দেনমোহর দেবেন তার ওপর ভিত্তি করে বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের ফি নির্ধারণ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিয়ের আইন ও একই। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা-২০০৯; এপ্রিল ১০, ২০১১ তারিখে সংশোধন করেছে।

এই বিয়ের আইন এর ১০ ধারা মোতাবেক যিনি বিয়ের রেজিস্ট্রি করবেন তিনি বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণের জন্য ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দেনমোহরের ক্ষেত্রে এক হাজার বা এর অংশ বিশেষের জন্য ১২.৫০ টাকা হারে ফি আদায় করতে পারবেন।

দেনমোহর যদি ৪ লাখ টাকার বেশি হয় তাহলে পরবর্তী প্রতি লাখে ১০০ টাকা হারে আদায় করবেন। তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, দেনমোহরের পরিমাণ যাই হোক না কেন সর্বনিম্ন ফি ২০০ টাকার কম হবে না। অবশ্য সরকার সময়ে সময়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ফি পরিবর্তনও করে থাকে।

কাজী সাহেব বা যিনি বিয়ের রেজিস্ট্রি করবেন তাকে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিলে তিনি একটি প্রাপ্তি রশিদ দেবেন। মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের পর রেজিস্ট্রার বর ও কনেপক্ষকে বিয়ের কাবিননামার কপিটি দেবেন।

মুসলিম বিয়ের আইন অনুসারে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক এবং এই দায়িত্ব পুরুষের। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন না করা হলে, ২ বছর পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য মেয়াদের বিনা শ্রম কারাবাস বা ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

ইসলামে বহু বিবাহ আইন

ইসলাম একের বেশি বা বহু বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী একজন পুরুষ একত্রে চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারেন। তবে এখানে কিছু শর্ত আছে। বহুবিবাহের ক্ষেত্রে অবশ্যই সব স্ত্রীর মধ্যে ভরণপোষণ, আবাসন এবং শয্যাসঙ্গমনের ক্ষেত্রে শতভাগ সমতা বিধান করতে হবে। তবে ১ম বিয়ের পর পরবর্তি বিয়েগুলো করার ক্ষেত্রে পূর্বের স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে।

হযরত সুলাইমান (আ.)-এর ৯০ জন স্ত্রী ছিলেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সময় ইসলাম গ্রহণের আগে কিছু সাহাবীদের ৫-৮ জন স্ত্রী ছিলেন। রাসুল (সা) তাদেরকে ৪ জন স্ত্রী রেখে বাকিদের তালাক দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

একজন স্ত্রী যদি বন্ধ্যা হয় অথবা হতে পারে অসুস্থ হওয়ার কারণে যদি তার স্বামীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারে এক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য একজন নারীকে বিয়ে করা যাবে।

অথবা এমনটি যদি হয় যে, একজন অবিবাহিত অথবা বিধবা নারী যদি স্বামীর আত্মীয় হয় যার দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই, তাহলে তাকে প্রথম স্ত্রীর পাশাপাশি দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে নিজের পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া যাবে।

পুরুষের চেয়ে নারীরা বার্ধক্যের শিকার হন। সেক্ষেত্রে যদি এমনটা হয় যে স্ত্রী তার স্বামীর শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না এবং স্বামীর কামশক্তি এতটাই প্রবল যে তিনি ব্যভিচারের দিকে পা বাড়াচ্ছেন তাহলে সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিবাহ করা যাবে।

বাংলাদেশে ডিভোর্স বা তালাক এর আইন

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, পুরুষ এবং নারী উভয়েই পরষ্পরকে তালাক দেবার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর ক্ষমতা রাখেন। তবে এজন্য বিয়ের সময় কাবিননামায় তালাকে তাওফিজ-এর ক্ষমতা স্ত্রীকে দিতে হয়। তালাক দেবার জন্য মুখে তিনবার “তালাক” শব্দটি উচ্চারণ করাই যথেষ্ট হলেও বাংলাদেশের তালাক এর আইন অনুযায়ী, ডিভোর্সের জন্য অবশ্যই দুই পক্ষের লিখিত চুক্তি থাকতে হবে। তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ হয়ে যাবেন।

বাল্য বিবাহ এবং বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের শাস্তি

বাংলাদেশে ২০১৭ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ২ নং ধারার ৪ নং উপধারায় বাল্য বিবাহের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ উপধারা অনুযায়ী, যখন বিয়ের একপক্ষ বা উভয় পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হবে, তখন সেই বিয়েকে আইনত বাল্যবিবাহ বলা হবে।অপ্রাপ্ত বয়স্ক ২১ বছর পূর্ণ করে নি এমন পুরুষ অথবা ১৮ বছর পূর্ণ করে নি এমন নারী।

আমাদের দেশে বিয়ের আইন থাকলেও সবচেয়ে বেশি যে ঘটনাটি ঘটে সেটা হলো, ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হলেও বিয়ের কনে হয় অপ্রাপ্ত বয়স্ক। সেক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৭ ধারা অনুসারে, বর যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয় আর কনে অপ্রাপ্ত বয়স্ক, তাহলে বাল্য বিবাহের অপরাধে বরকে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে এবং কনে যেহেতু অপ্রাপ্ত বয়স্ক সেহেতু তাকে অনধিক ১ মাসের আটকাদেশ বা অনধিক ৫০,০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তি প্রদান করা যাবে।

এর পাশাপাশি বিয়ের অভিভাবক বা পিতা মাতাকেও বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করানোর অপরাধে অনধিক ২ বছর ও অন্তত ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য, সেবা, এবং পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন তাসলিমা ম্যারেজ মিডিয়ার সাথে।
কল করুনঃ+880-1407-004393 অথবা +88-01782-006615 এ।
আমাদের মেইল করুন taslima55bd@gmail.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here